মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
জিয়া উদ্দিন সিকদার কে ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সংবর্ধনা প্রার্থীদের মাঝে এখনো আতঙ্ক কাটেনি: সাইফুল হক প্রার্থীদের ক্যাম্পিং ও জনগণের ভোটের নিরাপত্তা পেলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে – ব্যারিস্টার ফুয়াদ মৃত চাচার পালক পুত্রকে ওয়ারিশ হিসেবে উপস্থাপনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বরিশাল-৪ আসনে জামায়াত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার, কতজন তুললেন জমা দিলেন তারেক রহমান ঢাকা-১৭ আসনে বেস্ট প্রার্থী: পার্থ তাসনিম জারার পদত্যাগ নিয়ে মুখ খুললেন আখতার পদত্যাগকারীদের বিষয়ে যা বললেন নাহিদ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে স্বর্ণ কলাপাড়ায় ঘন কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা পটুয়াখালী-০৪ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়ন পত্র দাখিল কলাপাড়া পৌর মহিলা দলের মতবিনিময় সভা ও দোয়া মোনাজাত স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার সময় মাঝ নদীতে প্রাণ হারালেন স্বামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতরাও সক্রিয়
জীবিকার নদীতে জীবনের স্বপ্নবিলীন

জীবিকার নদীতে জীবনের স্বপ্নবিলীন

Sharing is caring!

রাসেল হোসেন: ‘একূল ভাঙে ওকূল গড়ে এই তো নদীর খেলা। সকাল বেলার আমির রে ভাই (ও ভাই) ফকীর, সন্ধ্যাবেলা।’ এই গানের কলিটি মিশে আছে নদী পারের মানুষদের জীবন প্রবাহে। নদী পাড়ের মানুষ ভাঙা-গড়ার খেলায় হারায় তার সহায়-সম্বল, সকালের ধনী বিকালে হয় ফকির। ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশালে পর্যাপ্ত ধান আর খাল না দেখা গেলেও প্রবাহমান আছে নদীগুলো। তবে নদীগুলো কখনো প্রভাবশালী দ্বারা দখল হয়, আবার নদীও প্রভাব বিস্তার করে দখল করে অনেক জেলে-কৃষকের শেষ সম্বলটুকু। এ যেন দুর্বলের ওপর সবলের চাপ তারপরও সবকিছু ঠিকঠাক।

আসছে বর্ষা মৌসুম। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নদী ভাঙল। নদী পারের মানুষের করোনার আতঙ্ক না থাকলেও আছে নদী ভাঙন আতংক। এমনই একটি নদী ভাঙল আতঙ্কের গ্রাম বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়ীয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা তীরের চরকান্দা গ্রাম। গত দুই যুগের নদী ভাঙলে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমি, প্রায় ৫ শাতাধিক বসত-ভিটা। এদের মধ্যে অনেকে আবার একাধিকবার হারিয়েছে বসত ভিটা।

এমনই একজনের সাথে কথা হয়। নাম রফিক গাজী, বয়স ৩০। ৫ ভাই-বোনের কেউই প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পার হতে পারে নাই শুধুমাত্র নদীর করাল গ্রাসের কারণে। সর্বশেষ ইচ্ছে ছিল ছোট ভাইকে লেখাপড়া করাবেন। তাও দেয়নি নদী। যখনি ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছেন ঠিক তখনই নদী গ্রাস করে নেয় তাঁর মাথা রাখার ঠাঁইটুকু। স্বপ্নগুলো সবসময়ই ভাসছে কীর্তনখোলায়। কখনো মাফ করেনি রাক্ষুসে নদী। এ পর্যন্ত তিন বার হারিয়েছেন বসত-ভিটা। এখন আর সামর্থ্য নেই জমি কিনে বাড়ি করার। তাই বাধ্য হয়ে জমি ভাড়া করে থাকার ঘরটুকু রাখছে। পেশায় জেলে হওয়ায় নদী পারেই থাকতে হচ্ছে। জীবিকার নদীতেই জীবনের স্বপ্ন বিলীন হয় এমন হাজারো রফিকের। তারপরও নদীকেই আপন করে নিয়েই বেঁচে থাকে রফিকরা। নদীর সাথে গড়ে তুলে আত্মার সর্ম্পক। তারপরও নদীও মাফ করে তাদের। রাক্ষুসে এই নদী ৬ বছর আগে গিলে খায় প্রায় ৪০ রকমের ফলজ গাছসহ ৩ একর জমি নিয়ে গড়া আমার দাদা বাড়িটিও। যার ক্ষত এ জীবনে শুকাবে না। অন্তত আমার চাচতো ভাইদের বুক থেকে।

চরবাড়ীয়া ইউনিয়নের চরকান্দা নামক এই গ্রামে অনেকেই রফিকের মত জমি ভাড়া করে ঘর তুলে থাকছেন অনেকেই। তাদের আবার ও তাড়া করে বেড়াচ্ছে নদী ভাঙন। এখনও প্রায় ৫০ টি ঘড়-বাড়ি আছে নদী তীরে। বর্ষা না আসতেই শুরু হয়ে গেছে নদী ভাঙন। প্রতিনিয়তই আতংকে দিন কাটছে তাদের। এই এলাকায় গত বছর ভরা বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের সময় সামান্য কিছু বালুর ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়েছে। নদী আর ভাঙন তুলনায় তা নগন্য ।

রাষ্ট্রীয় সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)-এর সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতি বছর ভাঙনে নদীতে চলে যায় প্রায় চার হাজার হেক্টর জমি। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখখানেক পরিবার। সব কিছু হারিয়ে নানা ধরনের দুর্দশার মুখোমুখি হয় তাঁরা।

বাংলাদেশের ভাঙন-প্রবণ অধিকাংশ নদীর পাড়ই বাঁধাই করা নয়। অনেক জায়গায় বালুর বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হলেও নদী ভাঙলে বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়মিত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই অনেকের মতে নদী ভাঙল এখন সব থেকে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারানোর অধিকাংশই জেলে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য নদী ভাঙন কবলিত মানুষদের পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা বা পুণর্বাসন করা হয় না। মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তথ্য অনুযায়ী সর্ব শেষ ১৮ সালে মৎস রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আর এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে নদী পারের জেলেদের। অথচ এরা নাই কোনো প্রচার-প্রচারণায়। দেখা যায় না কার্যকর কোনো সংগঠন। যারা জেলেদের অধিকার নিয়ে কাজ করে ।

বাংলাদেশে নদী ভাঙন প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় এর পূর্বাভাস এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে এখনই পূর্বাভাস অনুযায়ী নদী পারের মানুষদের অন্যত্র স্থানান্তর করার হোক। আর ভাঙন কবলিতদের পুণর্বাসন করা হোক।

লেখক: প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD